আয়রন কোন কোন খাবারে পাওয়া যায়? আয়রন সমৃদ্ধ উদ্ভিজ্জ খাবার

আয়রন কোন কোন খাবারে পাওয়া যায়?

আয়রন কি এবং কেন প্রয়োজন?

  • আয়রনের ভূমিকা শরীরে

  • আয়রনের অভাবের লক্ষণ

আয়রনের ধরণ

  • হিম আয়রন (Heme Iron)

  • নন-হিম আয়রন (Non-Heme Iron)

আয়রন সমৃদ্ধ প্রাণিজ খাবার

  • লাল মাংস

  • মাছ ও সামুদ্রিক খাবার

  • ডিম ও পোল্ট্রি

আয়রন সমৃদ্ধ উদ্ভিজ্জ খাবার

  • শাকসবজি

  • ডাল ও ডালজাতীয় শস্য

  • বাদাম ও বীজ

আয়রন শোষণ বাড়ানোর উপায়

  • ভিটামিন সি এর সাথে গ্রহণ

  • আয়রন শোষণ বাধাগ্রস্ত করে এমন খাবার!



আয়রন কোন কোন খাবারে পাওয়া যায়?

আয়রন এমন একটি খনিজ যা আমাদের শরীরের রক্ত তৈরি এবং অক্সিজেন পরিবহনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই খনিজটি হিমোগ্লোবিনের প্রধান উপাদান, যা লোহিত রক্তকণিকায় থাকে এবং শরীরের প্রতিটি কোষে অক্সিজেন পৌঁছে দেয়। কিন্তু অনেকেই জানেন না, আমাদের খাবারের মাধ্যমে আয়রন পাওয়ার নানা উৎস রয়েছে। লাল মাংস, ডাল, শাকসবজি, বাদাম, এমনকি কিছু ফলেও আয়রন পাওয়া যায়। সঠিক পরিমাণে আয়রন গ্রহণ করলে শরীর থাকে প্রাণবন্ত, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, এবং মানসিক কার্যক্ষমতাও ভালো থাকে। অন্যদিকে আয়রনের ঘাটতি হলে রক্তস্বল্পতা (অ্যানিমিয়া), দুর্বলতা, মনোযোগের ঘাটতি, এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাসের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।


আয়রন কি এবং কেন প্রয়োজন?

আয়রন এমন একটি অপরিহার্য খনিজ যা শরীর নিজে তৈরি করতে পারে না। তাই আমাদের অবশ্যই খাবারের মাধ্যমে এটি গ্রহণ করতে হয়। আয়রন শুধু হিমোগ্লোবিন তৈরিতেই নয়, মায়োগ্লোবিন (পেশীতে অক্সিজেন সংরক্ষণ করে) এবং বিভিন্ন এনজাইম তৈরিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি শরীরের শক্তি উৎপাদন প্রক্রিয়ার অংশ এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বজায় রাখতেও সাহায্য করে।


আয়রনের ভূমিকা শরীরে

  • অক্সিজেন পরিবহন: হিমোগ্লোবিনের মাধ্যমে ফুসফুস থেকে শরীরের সব অংশে অক্সিজেন পৌঁছায়।

  • শক্তি উৎপাদন: খাবার থেকে প্রাপ্ত শক্তি কোষে পৌঁছে দিতে সহায়তা করে।

  • রোগ প্রতিরোধ: সংক্রমণ প্রতিরোধে শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে।

  • মস্তিষ্কের কার্যকারিতা: মনোযোগ ও শেখার ক্ষমতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।


  • আয়রনের অভাবের লক্ষণ

    • সবসময় ক্লান্ত লাগা

    • শ্বাসকষ্ট বা দ্রুত শ্বাস

    • মাথা ঘোরা বা অজ্ঞান হওয়ার প্রবণতা

    • হাত-পা ঠান্ডা লাগা

    • নখ ভঙ্গুর হয়ে যাওয়া

    • মুখের কোণে ফাটা বা জ্বালা

  • আয়রনের ধরণ

    আমরা যে আয়রন খাবারের মাধ্যমে পাই, তা মূলত দুই ধরণের হয়:

    হিম আয়রন (Heme Iron)

    হিম আয়রন মূলত প্রাণিজ উৎসের খাবারে পাওয়া যায়, যেমন লাল মাংস, মাছ, মুরগি। এটি শরীর খুব সহজেই শোষণ করতে পারে (প্রায় ১৫-৩৫% পর্যন্ত)। এজন্য হিম আয়রন সমৃদ্ধ খাবার দ্রুত আয়রনের ঘাটতি পূরণে সহায়ক।

    নন-হিম আয়রন (Non-Heme Iron)

    নন-হিম আয়রন উদ্ভিজ্জ খাবারে যেমন শাকসবজি, ডাল, বাদাম, বীজে পাওয়া যায়। তবে এটি হিম আয়রনের তুলনায় কম শোষিত হয় (প্রায় ২-২০% পর্যন্ত)। তাই নন-হিম আয়রনযুক্ত খাবারের সাথে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খেলে শোষণ বাড়ে।


    আয়রন সমৃদ্ধ প্রাণিজ খাবার

    লাল মাংস

    গরু, খাসি, ভেড়ার মাংস আয়রনের অন্যতম সেরা উৎস। প্রতি ১০০ গ্রাম গরুর মাংসে গড়ে ২.৬ মি.গ্রা. আয়রন থাকে। এগুলো হিম আয়রনের সমৃদ্ধ উৎস হওয়ায় দ্রুত শোষিত হয়। তবে অতিরিক্ত খেলে কোলেস্টেরল ও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়তে পারে, তাই পরিমিত পরিমাণে খাওয়া জরুরি।

    মাছ ও সামুদ্রিক খাবার

    স্যারডিন, স্যামন, টুনা, শামুক ও চিংড়িতে প্রচুর আয়রন থাকে। বিশেষ করে শামুকে প্রতি ১০০ গ্রামে প্রায় ২৮ মি.গ্রা. আয়রন থাকে, যা দৈনিক চাহিদার অনেক বেশি। এছাড়া মাছ প্রোটিন ও ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডও সরবরাহ করে।

    ডিম ও পোল্ট্রি

    ডিমের কুসুম আয়রনের ভালো উৎস। প্রতি ১০০ গ্রাম ডিমে প্রায় ১.২ মি.গ্রা. আয়রন থাকে। মুরগি ও হাঁসের মাংসেও আয়রন রয়েছে, যদিও লাল মাংসের তুলনায় কিছুটা কম।


    আয়রন সমৃদ্ধ উদ্ভিজ্জ খাবার

    শাকসবজি

    পালং শাক, কলমি শাক, লাল শাক, কচু শাক—এসবেই প্রচুর নন-হিম আয়রন থাকে। উদাহরণস্বরূপ, প্রতি ১০০ গ্রাম পালং শাকে প্রায় ২.৭ মি.গ্রা. আয়রন পাওয়া যায়।

    ডাল ও ডালজাতীয় শস্য

    মসুর ডাল, মুগ ডাল, ছোলা, রাজমা, মটর—এসব ডালে প্রচুর আয়রন আছে। প্রতি ১০০ গ্রাম রান্না করা মসুর ডালে প্রায় ৩.৩ মি.গ্রা. আয়রন থাকে।

    বাদাম ও বীজ

    কাজু, বাদাম, কুমড়ার বীজ, তিল, সূর্যমুখীর বীজ—এসব বীজে আয়রন প্রচুর পরিমাণে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, ৩০ গ্রাম কুমড়ার বীজে প্রায় ২.৫ মি.গ্রা. আয়রন থাকে।

Post a Comment

0 Comments