নাম : বাংলা-চিরতা, সংস্কৃত-কিরতিক, জ্বরান্তক, হিন্দী-চিরায়তা।
পরিচয় : এই গাছ সচরাচর দেড় ফুট উঁচু হইয়া থাকে। এই গাছে ছোট ছোট সাদা এবং কালো ফুল হয়। চিরতার আর এক নাম ভূনিস্ব'।
ব্যবহার ঃ ঔষধে চিরতার মূল, কান্ড ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়। চিরতা ভীষণ উষ্ণ-সেই কারণে চিরতার সেবন কালে সামান্য মিছরিচূর্ণ মিশ্রিত করিয়া সেবন করা বিধেয়।
গুণ: ইহা লম্বা, শীতল, রুক্ষ, সারক এবং তিক্তরস যুক্ত।
মাত্রা ঃ
(ক) পূর্ণ বয়স্কদের জন্য : ক্কাথ ১০ তোলা, চূর্ণ ৪ আনা।
(খ) ছোটদের জন্য ঃ ক্বাথ ৫ তোলা, চূর্ণ ২ আনা । (গ) শিশুদের জন্য ঃ ক্কাথ ৩ তোলা, চূর্ণ ১ আনা ।
আময়িক প্রয়োগ : চিরতা সেবনে জ্বর, নিপাত, রক্তদোষ, কফ পিত্ত, দাহ, ব্রণ, শ্বাস, কৃমি, কৃষ্ণা, কাণ, শোধ ও কুষ্ঠ নির্ধারিত হয়।
নিম্নলিখিত রোগ আরোগ্য কারক
১। সন্নিপাত জ্বরে চিরতার ৰুথ সেবনে প্রভূত উপকার হয়।
২। সাধারণ জ্বরে : চিরতার পাচন সেবনে জ্বর নিবারিত হইয়া থাকে।
৩। পুরাতন জ্বরে ঃ প্রত্যহ এক ছটাক চিরতার ক্কাথ মিছরিচূর্ণ জলসহ সেবনে জ্বর বন্ধ হয় ও শরীর সুস্থ হয়।
৪। ক্ষুধামান্দ্যে : প্রত্যহ প্রাতঃকালে এক ছটাক চিরতার কাথ সেবনে অগ্নি প্রদীপ্ত হয় এবং ক্ষুধা বৃদ্ধি পায়।
৫। পেটে ক্রিমি থাকিলে : প্রত্যহ প্রাতঃকালে ১ ছটাক চিরতার কাথ সেবনে মলের সঙ্গে ক্রিমি বাহির হইয়া আসে।
৬। পেটে দূষিত বায়ু সঞ্চিত হইলে : চিরতা ভেজান জল সেবনে দূষিত বায়ু নিবারণ হয়।
৭। রক্তদোষে : চিরতা ভেজান জল নিয়মিত সেবনে প্রভূত উপকার পাওয়া যায়।
৮। স্তনদুগ্ধ বিশ্বাদযুক্ত হইলে : চিরতার কাথ সেবনে স্তনদুগ্ধ সুস্বাদ হইয়া থাকে।
৯। যকৃৎ রোগে ঃ চিরতার ক্বাথ অত্যন্ত ফলপ্রদ। চিরতা সামান্য দাস্তকারক হওয়ায় যকৃৎ দোষে অত্যন্ত উপকারী।
১০। পিত্ত ঘটিত কারণে শরীরে দাহ সৃষ্টি হইলে ঃ চিরতা ভেজান জল সেবনে প্রভূত উপকার পাওয়া যায়।
১১। শোখ, কফ, পিত্ত ও শ্বাসকষ্টে ঃ চিরতার ব্যবহার হইয়া থাকে। প্রত্যহ সকালে ঘুম হইতে উঠিয়া চিরতা-ভেজান জল সেবন করিলে উপরিউক্ত রোগ সমূহ নিবারিত হইয়া থাকে।
১২। ব্রণ এবং চুলকানিতে ও চিরতার ভাব প্রত্যহ প্রাতঃকালে মিছরিচূর্ণসহ সেবন করিলে বিশেষ উপকার পাওয়া যায়।
১৩। কুষ্ঠরোগে ৪ নিয়মিত ভাবে চিরতার কাথ সেবনে কুষ্ঠরোগ প্রশমিত হইয়া থাকে।
১৪। গর্ভিণীর গা বমি বমি করিলে অথবা বার বার বমন হইলে ঃ এক আনা পরিমাণ চিরতাপূর্ণ মধু অথবা মিছৱিচূৰ্ণসহ সেবন করাইলে ৰমনভাবে নিবারিত হইয়া থাকে।
(চাকুন্দে)
নাম : বাংলা-চাকুন্দে, চাকুন্দা ।
পরিচয় : ইহা বর্ষাকালে বাগানের ধারে অথবা পতিত জমিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে জনিয়া থাকে। ইহার ফুল হলুদ রঙের হইয়া থাকে। বরবটি কলাইয়ের মত ইহার শুঁটি হয়। এই শুঁটি শুষ্ক হইলে, অভ্যন্তর হইতে বীজ বাহির হইয়া পড়ে।
ব্যবহার: ঔষধে ইহার পাতা, মূল, বীজ ও ফল ব্যবহার হইয়া থাকে।
গুণ (ফলবাদে) : ইহা লঘু, হিম, হৃদ ও সুস্বাদু।
আমায়িক প্রয়োগ (ফল বাদে) : ইহা দদ্রু, কুষ্ঠ, শ্বাস, পিত্ত, বায়ু ও ক্রিমিনামক
চাকুন্দে ফলের গুণ : উষ্ণ বীর্য সমন্বিত ও কটু।
চাকুন্দ ফলের আময়িক প্রয়োগ:
ইহা প্রয়োগে দদ্রু, বায়ু, বিষদোষ, গুল্ম, শ্বাদোষ, কাশ, কুষ্ঠ ও ক্রিমি ইত্যাদি রোগ নিবারিত হয়।
মাত্রা ঃ
(ক) পাতার রস ১ তোলা হইতে ২ তোলা পর্যন্ত । (খ) মূল চূর্ণ ২ আনা হইতে ৪ আনা পর্যন্ত।
(গ) বীজ ১ আনা হইতে ২ আনা পর্যন্ত ।
নিম্নলিখিত রোগ আরোগ্য কারক
১। পেটের ক্রিমিতে ঃ এক আনা পরিমাণ চাকুন্দের বীজ চূর্ণ মধুসহ সেবন করিলে বাহ্যের সঙ্গে ক্রিমি নির্গত হয়।
২। কুষ্ঠ রোগে : চাকুন্দে পাতা ও মূল জলসহ সিদ্ধ করিয়া সেই সিদ্ধ জল পান করিলে এবং চাকুন্দের শিকড় গৰামত সহ পেষণ পূর্বক কুষ্ঠক্ষতে প্রলেপ দিলে কুষ্ঠ রোগ নিবারিত হয়।
৩। দাদ হইলে ঃ চাকুন্দের শিকড় গব্যঘৃত সহ পেষণ পূর্বক প্রলেপ দিলে বিশেষ উপকার পাওয়া যায়।
৪। কফদোষে : চাকুন্দের পাতার সিদ্ধ জল ঈষদুষ্ণ অবস্থায় সেবন করিলে কফ নির্গত হইয়া কফদোষ বিদুরিত হইয়া থাকে।
৫। ফোঁড়ায় ঃ চাকুন্দে পাতা পেষণ পূর্বক প্রলেপে উপকার হয়।
৬। শিশুদের তড়কা রোগ হইলে ঃ আধ আনা পরিমাণ চাকুন্দে ফলের বীজচূর্ণ আধ পোয়া দুগ্ধ সহ সেবন করাইলে বাহ্য হইয়া তড়কা রোগ প্রশমিত হয়।
৭। গুল্ম হইলে : চাকুন্দে পাতা জলসহ অগ্নিতে সিদ্ধ করিয়া সেই জল ঈষদুষ্ণ অবস্থায় পান করিলে প্রভূত উপকার পাওয়া যায়।
৮। পৃষ্ঠব্রণ হইলে : চাকুন্দে পাতা গব্যঘৃত সহ পেষন পূর্বক উক্তস্থানে প্রলেপ দিলে পৃষ্ঠব্রণ নিবারিত হয়।
৯। হিকা রোগে ঃ এক ছটাক পরিমাণ চাকুন্দের কাথ কাশীর চিনিসহ যোগে সেবন করিলে, হিক্কা রোগে প্রশমিত হইয়া থাকে।
(চিতা)
নাম : বাংলা-চিতা, সংস্কৃত-চিত্রক, হিন্দী চীতা
পরিচয় ঃ এই গাছ সচরাচর ৩ ফুট উচ্চ হইয়া থাকে। পাতা অনেকাংশে তুলসী পাতার ন্যায়। ফুল ছোট আকারের হইলেও অনেকটা চামেলী ফুলের ন্যায়। চিতাকে আবার কেহ কেহ 'রাং চিতা' আখা দিয়া থাকেন।
চিতা দুই প্রকারেরঃ
(ক) সাধারণ চিতা ও
(খ) লাল চিতা।
পাড়াগাঁয়ের পতিত জমিতে ও বাগানের যত্রতত্র ইহা পর্যাপ্ত পরিমাণে জন্মিয়া থাকে।
ব্যবহার ঃ ঔষধে কেবল মাত্র চিতার মূলই ব্যবহার করা হইয়া থাকে ।
সতর্কতা : চিতার মূল অত্যন্ত বিষাক্ত, অতএর ঔষধে ব্যবহার কালীন মাত্রানুযায়ী প্রয়োগ করলে বিধেয়।
চিতার আঠা শরীরের যেখানে লাগিবে সেইখানেই ঘা সৃষ্টি হইতে পারে। অতএব শরীরের কোন অংশে যাহাতে চিতার আঠা না লাগে এ বিষয়ে যথেষ্ট সতর্কতার আবশ্যক চিতার আঠা চোখে লাগিলে চোখ নষ্ট হইবার সম্ভাবনা প্রবল। অতএব চিতা ব্যবহার কালীন বিশেষ সতর্কতার বাঞ্চনীয়। অবলম্বন করা
সাধারণ চিতা সাধারণ চিতার গুণ ইহা: ইহা রুক্ষ, কটু, লঘু, উষ্ণবীর্য, অগ্নিকারক, পাচক মল সংগ্রাহক।
সাধারণ চিতার আময়িক প্রয়োগ ঃ ইহা কুষ্ঠ, ক্রিমি, কাশ, শোথ, গ্রহণী, অর্শ পিত্ত, শ্লেষ্মা, বাতাশ ও বাতশ্লেষ্মা বিনাশক ।
'লাল চিতা'
লাল চিতার গুণ ও আমিয়ক প্রয়োগ ঃ ইহা লৌহের বাধক ও পারদ নিয়ামক। ইহা রসায়ন গুণ সমন্বিত, পুষ্টিকারক ও রুচিজনক।
মাত্রা ঃ দুই রতি।
প্লীহা রোগে ঃ চিতার আঠা পেটে লাগাইলে পেটে ঘা হয়, ইহাতে প্লীহা নিবারিত হইয়া থাকে।
0 Comments