ঘলঘসিয়া এবং ঘৃতকুমারী পাতার গুণাগুণ

ঘলঘসিয়া

নাম ঃ বাংলা-ঘলঘসিয়া, শুদ্ধ ও সংস্কৃত-দ্রোণা অথবা দ্রোণপুষ্পী।

পরিচয় : ইহা শীতকালে যন্ত্র-কত্র জন্মিয়া থাকে। গ্রীষ্মকালে এই গাছ শুকাইয়া যায়।

ব্যবহার ঃ ঔষধে কেবলমাত্র ঘলঘসিয়া পাতার রসই ব্যবহার করা হয়।

গুণ : ইহা লবণ মধুর ও কটুরস যুক্ত, রুক্ষ, গুরু, ভীষ্ম ভেদক, উষ্ণবীর্য সমন্বিত, মধুর বিপাক, বায়ু ও পিত্ত বর্ধক।

মাত্রা ঃ এক তোলা হইতে ২ তোলা ।

আময়িক প্রয়োগ : ইহা ক্রিমি, কামলা, আম, শোধ ও কফ নাশক

নিম্নলিখিত রোগ আরোগ্য কারক
১। কামলা বা ন্যাবা হইলে : ঘলঘসিয়া পাতার রস সেবনে প্রভূত উপকার পাওয়া যায়।

২। আমাশয় হইলে ঃ তিনটি ঘনঘসিয়া পাতা ও তিনটি গোলমরিচ একত্র পেষণ পূর্বক প্রতিদিন সেবন করিলে এক সপ্তাহ কালের মধ্যেই আমাশয় আরোগ্য হয় ।

৩। ক্রিমিতে : ঘলঘসিয়া পাতার পচি ফোঁটা রস-লবণসহ সেবন করিলে ক্রিমি প্রশমিত হইয়া থাকে।

৪ । কফাদিতে ঃ পাঁচ ফোঁটা ঘলঘসিয়া পাতার রস ও পাঁচ ফোঁটা থানুকুনি পাতার রস উষ্ণ জলসহ সেবন করিলে কফ নির্গত হইয়া থাকে।

৫। শোথ রোগে ঃ ঘলঘসিয়া পাতার রস অগ্নিতে সিদ্ধ করিয়া-মধুসহ সেবন করিলে উপকার পাওয়া যায়।

৬। চর্মরোগ অথবা চুলকানিতে : ঘলঘসিয়া পাতার রস তৈলের ন্যায় সর্ব শরীরে উত্তমরূপে মর্দন করিয়া স্নান করিলে এক পক্ষকালের মধ্যে চর্মরোগ ও চুলকানি আরোগ্য হইয়া থাকে ।

(ঘৃতকুমারী)

নাম ঃ বাংলা-ঘৃতকুমারী, সংস্কৃত-কুমারী, হিন্দী-ঘী কুয়ার।

পরিচয় ঃ ঘৃতকুমারীর পাতা দেখিতে আনারস পাতার মত। আনারস পাতা লম্বা আকারের এবং উহার পাতার ধারে কাঁটা থাকে, ঘৃতকুমারীর পাতা আনারস পাতা অপেক্ষা চওড়া এবং আকারে ছোট। ঘৃতকুমারীর পাতার ধারে কাঁটা থাকে না।

ব্যবহার ঃ ঘৃতকুমারী পাতা ভাঙ্গিলে এক প্রকার নরম শাঁস বাহির হয়, তাহাই ঔষধে ব্যবহার হইয়া থাকে।

মুসব্বর : ঘৃতকুমারীর রস হইতেই মুসব্বর প্রস্তুত করা হইয়া থাকে। ঘৃতকুমারী পাতা ভাঙ্গিলে যে রস বাহির হয়, তাহা মোটা কাপড়ের থলিতে রাখিলে, এক পক্ষকালের মধ্যেই জমাট বাঁধিয়া যায়। ঐ জমাট রসকেই মুসব্বর বলা হইয়া থাকে।

গুণ ঃ ইহা তিক্ত মধুর রসযুক্ত, ভেদক, পুষ্টিকারক, রসায়ন, চক্ষুর হিতকারক,

বলকারক ও শুক্রবর্ধক।

মাত্রা : রস ২ তোলা, মুসব্বর-আধ আনা ।

আময়িক প্রয়োগ ঃ ইহা প্লীহা, গুল্ম, বিষদোষ, যকৃৎ, বায়ু, জ্বর, কফ, রক্তপিত্ত ও চর্মরোগ নাশক । অগ্নিদগ্ধ স্থানে—ইহার প্রলেপে প্রভুত উপকার পাওয়া যায় ।

নিম্নলিখিত রোগাদি আরোগ্য কারক

১। দেহের কোন স্থান অগ্নিদগ্ধ হইলে ঃ ঘৃতকুমারীর শাঁস পেষণ পূর্বক প্রলেপ দিলে দহন জ্বালার উপশম হয় ও বিশেষ উপকার পাওয়া যায় ৷

২। চর্মরোগে : এক তোলা পরিমাণ ঘৃতকুমারীর শাঁস সেবন করিলে এবং উহার প্রলেপ দিলে চর্মরোগ নিবারিত হইয়া থাকে।

৩। প্লীহা হইলে ঃ এক তোলা পরিমাণ ঘৃতকুমারীর রস হলুদ গুঁড়াসহ নিয়মিত সেবনে প্রভূত উপকার পাওয়া যায়।

৪। পেটে গুল্ম হইলে ঃ দুই তোলা পরিমাণ ঘৃতকুমারীর শাস-হলুদ চূর্ণসহ সেবন করিলে গুল্ম নিবারিত হয়।

৫। যকৃৎরোগে ঃ এক তোলা পরিমাণ ঘৃতকুমারীর শাঁস (প্রত্যহ) এক সপ্তাহকাল সেবনে যকৃৎ রোগ আরোগ্য হয়।

৬। রক্তপিত্ত রোগে ঃ এক তোলা পরিমাণ ঘৃতকুমারীর শাঁস মিছরিচূর্ণসহ নিয়মিত সেবনে বিশেষ উপকার পাওয়া যায়।

৭। কোন অঙ্গে বেদনা হইলে : মুসব্বর জলসহ আগুনে সিদ্ধ করিয়া উহার প্রলেপ দিলে বেদনা প্রশমিত হইয়া থাকে।

৮। পেটে বায়ু জন্মিলে ঃ ঘৃতকুমারীর শাঁস এক তোলা পরিমাণ সেবন করিলে বায়ু প্রশমিত হয় ও পেটে ঠান্ডা হয়।

৯ । ফোঁড়া হইলে ঃ ঘৃতকুমারী পেষণ পূর্বক ফোঁড়ায় প্রলেপ দিলে যন্ত্রণা প্রশমিত হয় ।

১০। কফে ঃ আধ আনা পরিমাণ মুসব্বর মধুসহ সেবনে বিশেষ উপকার পাওয়া যায় ।

১১। শিরঃপীড়ায় ঃ ঘৃতকুমারীর শাঁস মাথায় ও দুই রগে মর্দন করিলে শিরঃপীড়া নিবারিত হইয়া থাকে।


Post a Comment

0 Comments