গোয়ালে লতা, গাঁদা, এবং গুগ্‌গুল পাতা, গোক্ষুর গাছের গুণাগুণ

গোয়ালে লতা

পরিচয় ও গোয়ালে লতা এক প্রকারের লতানে গাছ। ইহা বহু প্রাচীন কোন গাছ অথবা ঘরের দেওয়াল বা বাড়ীর প্রাচীর বাহিয়া উঠে। বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ইহার প্রয়োগে সুফল পাওয়া যায়।

ব্যবহার ঃ গোয়ালে লতার পাতার রস ও মূল ঔষধে ব্যবহার করা হইয়া থাকে।
গুণ ঃ উহা উষ্ণবীর্য সমন্বিত, বিষয় ও তিক্ত-কষায় রসযুক্ত।
আময়িক প্রয়োগ : ইহা বিষদোষ নাশক, প্রমেহ আরোগ্যকারক এবং রক্ত নিরোধক।

মাত্রা ঃ এক তোলা হইতে চার আনা ।

নিম্নলিখিত রোগ আরোগ্য কারক

১। কোথাও কাটিয়া গেলে গোয়ালে লতার পাতার রস রগড়াইয়া ঐ পাতা ঐ স্থানে বাঁধিয়া রাখিলে সঙ্গে সঙ্গে রক্ত পড়া বন্ধ হয়। কাঁটা স্থানটিও জোড়া লাগে।

২। বৃশ্চিক দংশন করিলে হুল উত্তোলন পূর্বক দষ্টস্থানে গোয়ালে লতার পাতার রস ৫/৬ বার লাগাইলে বৃশ্চিক দংশন জনিত জ্বালা নিবারিত হইয়া থাকে।

৩। সর্প দংশন করিলে গোয়ালে লতার পাতার রস সঙ্গে সঙ্গে দৃষ্ট স্থানে লাগাইলে বিষক্রিয়া ব্যাহত হইয়া থাকে।

৪। প্রমেহ হইলে ঃ আধ তোলা গোয়ালে লতার পাতার রস ও সিকি তোলা গাঁদা পাতার রস মধুসহ নিয়মিত সেবন করিলে, প্রমেহ আরোগ্য হয়।

৫। অতিরিক্ত রক্তস্রাবে : আধ তোলা পরিমাণ গোয়ালে লতার মূলের রসের সহিত শীতল জল অথবা কাঁচা দুগ্ধ মিশ্রিত করিয়া প্রত্যহ সকাল ও বিকালে সেবন করিলে স্ত্রীলোকের অতিরিক্ত (মাসিক) রক্তস্রাব নিবারিত হয়।

(গাঁদা)

নাম : বাংলা-গাঁদা, হিন্দী- গেন্দা।

পরিচয় ঃ ইহা এক ধরণের অতি পরিচিত ফুলগাছ। এই গাছের ফুল হলুদ, লাল ও সাদা হয়।

ব্যবহার ঃ ঔষধে গাঁদা পাতার রসই ব্যবহার করা হইয়া থাকে। গুণ : সব রকম গাঁদাই সমগুণ সম্পন্ন। ইহা শুল শ্বাস ও বাতপিত্ত নাশক।

কোন কোন রোগ আরোগ্য কারক
১। কানের ব্যথায় : গাদা পাতার রস দ্বারা কর্ণ পূরণ করিলে কানেরব্যথা নিবারিত হয়।

২। কোথাও কাটিয়া গেলে : সঙ্গে সঙ্গে গাদা পাতার রস লাগাইলে রক্ত পড়া বন্ধ হয়।

৩। কোথাও ঘা হইলে ও ঘায়ে পোকা হইলে : গাদা পাতার রস নিষ্কাশন পূর্ব ক্ষতস্থানে লাগাইলে পোকা মরিয়া যায়।

(গুলঞ্চ)

নাম ঃ বাংলা-গুলঞ্চ, সংস্কৃত-গুড়ুচী, মধুপণী, অমৃত হিন্দী-গালেয়া ।

পরিচয় : গুলঞ্চের পাতা পান পাতার ন্যায়, ফুল সবুজ ও হলুদ মেশান ছাল মেটে রঙের। গুলঞ্চ এক প্রকারের লতা। ইহা অপর গাছ বাহিয়া উপরে উঠে। ইহার লতার উপরের ছালটি কাগজের ন্যায় পাতলা ।

ব্যবহার : ঔষধে ব্যবহার করিতে হইলে শুষ্ক গুলঞ্চ অপেক্ষা কাঁচা গুলঞ্চই ব্যবহার করা উচিত। কারণ শুষ্ক বা পাকা গুলঞ্চ অপেক্ষা কাঁচা গুলঞ্চের পাতা ডাঁটা প্রভৃতি সমগ্র লতাই ঔষধে ব্যবহার করা হইয়া থাকে ৷

গুণ ঃ গুলঞ্চ কটু, তিক্ত-কষায় রসযুক্ত মধুর বিপাক, উষ্ণ বীর্যান্বিত, লঘু রসায়ন, অগ্নিদীপক, মল সংগ্রাহক ও বলকারক। গুলঞ্চআমাদের দেশে কুইলাইনের বিকল্প হিসাবে ব্যবহৃত হয়। গুলঞ্চ সর্বপ্রকারের জ্বরের যম বলিলেও অত্যুক্তি হয় না। 

আময়িক প্রয়োগ ঃ ইহা হাম, দাহ, কাশ জ্বর, কৃমি, কণ্ঠ, প্রমেহ, তৃষ্ণা, কভু, বাত রক্ত, অর্শ, শ্বাস, কষ্ট হৃদরোগ, মূত্রকৃচ্ছ ও বায়ু বিনাশক।

গুলঞ্চের ব্যবহার সম্বন্ধে বিশেষ বক্তব্য

গুলঞ্চ যদি তিক্ত বৃক্ষ অর্থাৎ নিমগাছ ইত্যাদি বাহিয়া উপরে উঠে-তবে ঐ ধরণের গুলঞ্চ ঔষধ প্রস্তুত ব্যাপারে সর্বাপেক্ষা ফলপ্রদ। তিক্ত গাছযুক্ত গুলঞ্চ যদি না পাওয়া যায় তবে অল্প গুণ সম্পন্ন অর্থাৎ তেঁতুল ইত্যাদি গাছ আশ্রিত গুলঞ্চও ব্যবহার করা যায় । তিক্ত বৃক্ষ আশ্রিত গুলঞ্চ ব্যাবহারের সত্ত্বর ফল পাওয়া যায় । অম্লগুণ সম্পন্ন বৃক্ষ আশ্রিত গুলঞ্চের ব্যবহারে ফল পাইতে কিছু বিলম্ব ঘটে।

মাত্রা :
(ক) ত্বকচূর্ণ-তিন আনা ।
(খ) ক্বাথ-আট তোলা ।
(গ) রস-এক তোলা।

শিশুদের ক্ষেত্রে মাত্রা অর্ধেক ব্যবহার করা কর্তব্য।

নিম্নলিখিত রোগ আরোগ্য কারক

১। পুরাতন জ্বরে ঃ শাকের মত গুলঞ্চ পাতা রাঁধিয়া অম্লসহ আহার করিলে বিশেষ সুফল পাওয়া যায়। পাঁচ তোলা গুলঞ্চের ক্বাথ, পিপুল চূর্ণ ও মধুসহ একসপ্তাহ কাল সেবনে পুরাতন জ্বর আরোগ্য হইয়া থাকে ।

২। নতুন জ্বরে অথবা ম্যালেরিয়া জ্বরে ঃ এক তোলা গুলঞ্চের রস প্রতিদিন মধুসহ সেবনে বিশেষ উপকার পাওয়া যায়।

৩। বমন রোগে ঃ গুলঞ্চ লতা পেষণ পূর্বক উহা শীতল জলে পাঁচ ঘন্টা কাল ভিজাইয়া রাখিবার পর ঐ জল ছাকিয়া অল্প অল্প পান করিলে বমি বমি ভাব দূর হয় । ৪ । প্লীহা বড় হইলে ঃ গুলঞ্চের রস একপক্ষ কাল সেবনে প্লীহা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়া আসে।

৫। উপদংশ জনিত ক্ষতে বা গরমী ঘায়ে ঃ গুলঞ্চ বিশেষ ফলপ্রদ। গুলঞ্চের ক্কাথ দ্বারা গরমীর বা ধুইয়া ফেলিলে অল্পদিনের মধ্যে ঘা নির্দোষ ভাবে সারিয়া যায়।

৬। কামলা পাণ্ডু বা ন্যাবা হইলে ঃ এক তোলা গুলঞ্চের রস ৭ ফোঁটা মধুসহ তিনদিন সেবন করিলে বিশেষ উপকার পাওয়া যায়।

৭। মুত্রকৃছে : নিয়মিতভাবে প্রত্যহ প্রাতঃকালে গুলঞ্চের ক্বাথ মধুসহ সেবন করিলে বিশেষ সুফল পাওয়া যায়।

৮। শ্বাসকষ্টে ঃ নিয়মিত গুলঞ্চের রস মধুসহ সেবনে শ্বাসকষ্ট দূর হয়।

৯। হৃদরোগে : আধ তোলা পরিমাণ গুলঞ্চের রস তিনটি গোলমরিচ উষ্ণ জলসহ প্রতিদিন প্রাতঃকালে এক পক্ষকাল সেবনে হৃদরোগ বা বুকের দোষ দূর হয়।

১০। বাত রোগে ও পাঁচ তোলা গুলঞ্চের কাথ শীতল অবস্থায় শীতল জল সহ তিদিন সেবনে এক পক্ষেকালের মধ্যেই বাতরোগ আরোগ্য হয়।

১১। ক্রিমিতে ঃ আধতোলা পরিমাণ গুলঞ্চের রস উষ্ণ জলসহ সেবনে বিশেষ সুফল পাওয়া যায় ।

১২। দীর্ঘকাল রোগ ভোগের ফলে রোগী দুর্বল হইলে ঃ গুলঞ্চের রস এক তোলা, গব্য ঘৃত এক তোলা পুরাতন গুড় এক তোলা মধু ও দুগ্ধসহ সেবনে রসায়নের কার্য করে এবং রোগীর দূর্বলতা দূর হয়।

১৩। কুষ্ঠরোগে ঃ গুলঞ্চ বিশেষ উপকারী। প্রত্যহ প্রাতঃকালে এক তোলা গুলঞ্চের রস মধুসহ সেবন করিতে হইবে। তৎপরে বেলা দশ ঘটিকার সময় ঘৃতসহ শালিধানের অন্ন ভোজন করিতে হইবে এবং সায়ংকালে কেবলমাত্র দুগ্ধান্ন ভোজন করিতে হইবে। এইরূপে এক মাসকাল কাটাইলে-কুষ্ঠরোগ উপশম হয়। এই অবস্থায় গুলঞ্চের রস সেবন কালে মাছ মাংস খাওয়া উচিত নহে।

(গুগ্‌গুল)

নাম : বাংলা-গুগ্‌গুল; সংস্কৃত- গুগল: হিন্দী-গুগল।

পরিচয় ঃ এই গাছ ৫ হইতে ৬ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। এই গাছের ফুল বাদামী রঙের হইয়া থাকে-ফুল চিকন-যাহাকে গুগ্‌গুল আখ্যা দেওয়া হয় ।

গুণ ও আময়িক প্রয়োগ : ইহা ঘর্মকারক, রক্তশোধক, মাসিক স্রাবের গন্ডগোলে ইহা বিশেষ উপকারী। গুগুল সেবনে বাচ্চাদের দুর্বলতা দূর হয়। ইহা বদহজম ও জ্বর বিনাশক। ইহা অগ্নি প্রদীপ্ত করিয়া ক্ষুধা বৃদ্ধি করিয়া থাকে। গুগ্গুলের ধুপ প্রদানে সর্দি-কাশি আরোগ্য হয়।

(গোখরি (গোক্ষুর)

নাম : বাংলা-গোখরি; সংস্কৃত-গোক্ষুর, হিন্দী-গোখর।

গুণ ও আমরিক প্রয়োগ । ইহা প্রস্রাবের রোগে অত্যন্ত ফলপ্রদ এবং ধাতু দৌর্বল্যে ও রতিশক্তি হীনতায়ও অত্যন্ত কার্যকরী। গোখরি প্রয়োগে মূত্রপাত পাথুরি রোগ নিবারিত হয়।

ব্যবহার ঃ গোখরি গাছ খুব শীতল বিধায় ইহার প্রতিটি অংশই ঔষধে ব্যবহৃত হইয়া থাকে।

Post a Comment

0 Comments