বাবুই' তুলসীর পাতার গুণাগুণ সহমহ

নাম ঃ বাংলা-তুলসী; সংস্কৃত-তুলসী, সুরসা।


পরিচয় : প্রায় প্রতি হিন্দু পরিবারের সঙ্গে তুলসী গাছের বিশেষ পরিচয় আছে। পুজাদির ব্যাপারেও তুলসীপত্র প্রয়োজন।


তুলসী সাধারণতঃ চার প্রকার-

(ক) সাদা তুলসী

(খ) কৃষ্ণ তুলসী

(গ) বাবুই তুলসী ও

(ঘ) রাম তুলসী। তুলসী বৃক্ষ ভারতের প্রায় সর্বত্রই জন্মিয়া থাকে।


ব্যবহার : আমরা সচরাচর পুজাদির জন্য যে তুলসী পর্যাপ্ত পরিমাণে ব্যবহার করি তাহার নাম, সাদা তুলসী। যে তুলসীর পাতার রঙ কালো তাহা কৃষ্ণ তুলসী। বাবুই তুলসীও তুলসী পর্যায়ভুক্ত। যদিও বাবুই তুলসী দেব পুজাদিতে ব্যবহার করা হয় না। রাম তুলসীর পাতা অন্য তুলসী অপেক্ষা বড় আকারের হইয়া থাকে।


ঔষধে বাবুই' তুলসীর পাতাই বেশি ব্যবহার হইয়া থাকে। অবশ্য ঔষধ প্রস্তুতের ব্যাপারে যে কোন একটি তুলসী ব্যবহার করা চলে। কার্যকারিতার দিক হইতে সামান্য একটু হেরফের হয় মাত্র ! ঔষধে তুলসীর টাটকা ও রসযুক্ত পাতাই ব্যবহার করা উচিত। শুষ্ক পত্রের কার্যকরী শক্তি তেমন থাকে না । তুলসীর মধ্যে মধ্য-প্রকৃতির মূলই ঔষধ প্রস্তুতি উৎকৃষ্ট। ঔষধে তুলসী সঞ্চরী ব্যবহার করার নির্দেশ থাকিলে শুষ্ক বা প্রায় শুষ্ক মারীই ব্যবহার করা উচিত। ঔষধে তুলসীর মূল পাতা ও মঞ্জরী ব্যবহার করা হইয়া থাকে।


সাদা ও কৃষ্ণ তুলসী

সাদা ও কৃষ্ণ তুলসীর গুণ ইহা কটু তিক্ত রসযুক্ত, হৃদয়গ্রাহী, উষ্ণবীর্য, সমন্বিত, দাহজনক ও অগ্নিপ্রদীপক ।


সাদা ও কৃষ্ণ তুলসীর আমিয়ক প্রয়োগ : উভয়ই সমগুণ সম্পন্ন। ইহা পার্শ্ব শূল, মূত্রকৃচ্ছ, কুষ্ঠ, কফ, বায়ু ও রক্তদোষনাশক।


বাবুই তুলসী


বাবুই তুলসীর গুণ ঃ ইহা রুক্ষ, তীক্ষ্ম, কটু রসযুক্ত, হৃদয়গ্রাহী, বিদাহী, পিত্তবর্ধক, শীতবীর্য সমন্বিত, রুচিকারক ও অগ্নি-প্রদীপক ।


বাবুই তুলসীর আমিয়ক প্রয়োগ ঃ ইহা কৃমি, কফ ও রক্তদৃষ্টিনাশক।


মাত্রা : তুলসী পাতার রস ২ আনা হইতে ৪ আনা পর্যন্ত ।


নিম্নলিখিত রোগাদি আরোগ্য কারক

১। ধ্বজভঙ্গ হইলে ঃ আধ ইঞ্চি পরিমাণ তুলসী গাছের তুলসী গাছের মূল পানের সহিত নিয়মিত সেবন করিলে বিশেষ সুফল পাওয়া যায় ।


২। ম্যালেরিয়া আক্রমণ প্রতিষেধক : প্রত্যহ এক তোলা পরিমাণ তুলসী পাতার রস প্রাতঃকালে সেবন করিলে ম্যালেরিয়া রোগ আক্রমণ করিয়া ব্যক্তি বিশেষকে পর্যুদস্ত করিতে পারে না।


৩। হাম বা বসন্তের গুটি শীঘ্র বাহির না হইলে ঃ তুলসী পাতা ও আদার রস একটি ঝিনুকে একত্র মিশ্রিত করিয়া রোগীকে সেবন করাইলে-বসন্ত বা হামের গুটি সত্বর বাহির হইয়া পড়ে-এবং মৃত্যুভয় দূরীভূত হয়।


৪। শিশুদের সর্দিকাশি হইলে ঃ সাদা বা কৃষ্ণ তুলসী পাতার রস এক ঝিনুক পরিমাণ লইয়া তাহাতে দশ ফোঁটা মধু মিশাইয়া খাওয়াইলে বিশেষ উপকার পাওয়া যায়।


৫। কান কটূ কটূ করিলে ঃ বাবুই তুলসী পাতার রস ড্রপারের সাহায্যে ফোঁটা ফোঁটা কানে দিলে যন্ত্রণা প্রশমিত হয়।


৬। নাসিকা রোগে : আদা, তুলসী পাতা ও বাকস পাতা সম পরিমাণে লইয়া পেষণ পূর্বক একটি ন্যাকড়ায় জড়াইয়া বার বার উহার আঘ্রাণ লইলে নাসিকা রোগ আরোগ্য হয়।


৭। বাত ব্যাধিতে আক্রান্ত হইলে রামতুলসীর পাতার রসে একটি ন্যাকড়া কিছুক্ষণ ভিজাইয়া রাখিয়া ঐ রসযুক্ত ন্যাকড়া বেদনাস্থলে বাঁধিয়া রাখিলে বাতের বেদনা প্রশমতি হয়।


৮। দাদ হইলে ঃ প্রথমে দাদ ভালভাবে চুলকাইয়া ভুলসী পাতার রস ও লেবুর রস একত্র মিশ্রিত করিয়া দাদস্থানে উত্তমরূপে মর্দন করিলে আরাগ্য হইয়া থাকে।


৯। পীনস রোগে ঃ কৃষ্ণতুলসীর মঙ্গরী চূর্ণ করিয়া তাহার মধ্য প্রয়োগে বিশেষ সুফল পাওয়া যায়।


১০। গণোরিয়া বা মেহরোগে : তুলসী মঞ্জরী হইতে বীজ বাহির করিয়া জলে ভিজাইয়া রাখিতে হইবে। আধ ঘন্টা পরে ঐ জলের দিকে ডাকাইলে ডিমের লালার মত এক প্রকার পদার্থ দৃষ্ট হইবে। ঐ জল এক ভোলা পরিমাণ লইয়া নিছবিচূর্ণসহ প্রভাহ

প্রাতঃকালে সেবন করিলে মেহজনিত জ্বালা যন্ত্রণা নিবারিত হইয়া থাকে।


১১। বৃশ্চিক দংশন করিলে প্রথমে নখ, চিমটা বা ছুরির সাহায্যে হল বাহির করিয়া ঐ দৃষ্ট স্থানে সাদা তুলসীর মূল পেষণ পূর্বক লাগাইলে সত্বর বৃশ্চিক দংশনজালা প্রশমিত হয়।


১২। বোলতা বা ঐমরুলে কামড়াইলে রামতুলসীর পাতার রস দ্বারা দৃষ্ট স্থান মর্দন করিলে যন্ত্রণা খারিত হইয়া থাকে।


১৩। শরীরে পারদ প্রবেশ করিলে ঃ প্রতিদিন প্রাতঃকালে দুই তোলা পরিমাণ কৃষ্ণ তুলসী পাতার রস সেবন করিলে পারাদোষ বিনষ্ট হয় ।


১৪ । অন্ডকোষ টন্‌ টন্‌ করিলে অথবা রক্ত-প্রস্রাব হইলে : চার তোলা পরিমাণ বাবুই তুলসীর পাতার রস মিছরিচূর্ণ সহ সেবন করিলে-যন্ত্রণা প্রশমিত হইয়া থাকে ।

Post a Comment

0 Comments