তেলাকুচা ও দূর্বা ঘাসের গুণাগুণ

তেলাকুচা

নাম ঃ বাংলা-তেলাকুচা; শুদ্ধ ও সংস্কৃত-বিম্বী, কোদ্রব ।

পরিচয় : তেলাকুচার ফলকে কু’দরী বলা হয়। কু’দরী দেখিতে অনেকটা টলের মত । আর একপ্রকার তেলাকুচা আছে- তাহা তিক্ত ও বিস্বাদযুক্ত।

তেলাকুচা দুই রকমের-
(ক) মিষ্ট ও 
(খ) তিক্ত। মিষ্ট তেলাকুচার ফলেল নাম কু’দরী। তিক্ত শ্রেণীর তেলাকুচা শযারের পক্ষে অনিষ্টকারী বলিয়া উহার ব্যবহার হয় না।

ব্যবহার : ঔষধে মিষ্ট তেলাকুচা (যাহার ফলের নাম কু’দরী) তাহাই ব্যহার হইয়া থাকে । কোন কোন কু’দরী সেবনেরও নির্দেশ দেওয়া হয় ৷

গুণ ঃ ইহা গুরু, মধুর রসযুক্ত ও শীতবীর্য সমম্বিত।

আময়িক প্রয়োগ ঃ ইহা রুচিকারক, রক্তপিত্ত, প্রশমক, বিবন্ধক ও আধান কারক ।

মাত্রা : (ক) রড়দের জন্য পাতা ও শিকড়ের রস-২ তোলা । (খ) ছোটদের জন্য পাতা ও শিকড়ের রস-আধ তোলা।

নিম্নলিখিত রোগাদি আরোগ্য কারক

১। রক্তপিত্ত দোষে ঃ কাশীর চিনি সহ কুদরী সেবনে বিশেষ উপকার পাওয়া যায়।

২। আমাশয় হইলে ঃ এক তোলা পরিমাণ মিষ্ট তেলাকুচার রস কাশীর চিনি মিশ্রিত করিয়া সেবন করিলে বিশেষ উপকার পাওয়া যায়।

৩। খোস, পাঁচড়া ছুীল ইত্যাদি চর্মরোগে : তেলাকুচা পাতার রস সেবনে ও মস্তকে মর্দনে বিশেষ উপকার পাওয়া যায়।

৪ । রক্ত আমাশয়ে ঃ এক তোলা পরিমাণ তেলাকুচার পাতার রস লৌহ পাত্রে উত্তপ্ত করিয়া এবং উহাতে অর্ধ তোলা ইক্ষু চিনি মিশ্রিত করিয়া সেবন করিলে রক্ত আমাশয় নিবারিত হইয়া থাকে ।

৫। অত্যধিক গরমের ফলে মাথা ঘুরিলে : তেলাকুচা পাতার রস কপালে ও মস্ত কে মর্দন করিলে উপকার পাওয়া যায়।

৬। হস্তে ও পদে দাহ ও জ্বালা সৃষ্টি হইলে ঃ তেলাকুচা পাতা ও লতার ডগা থেঁতো করিয়া হাতে পারে মালিশ করিলে জ্বালা নিবারিত হইয়া থাকে।

৭: জিহ্বা ক্ষত হইলে ঃ তেলাকুচার কাঁচা ফল চর্বণ পূর্বক সেই লালা মিশ্রিত রস দ্বারা জিহ্বার প্রলেপ দিলে-জিহ্বা ক্ষত আরোগ্য হয় ।

৮। শিরঃপীড়া হইলে ঃ তেলাকুচার পাতার রস বাহির করিয়া তৈল সহ মিশ্ৰণ পূর্বক মস্তকে মর্দন করিলে-শিরঃপীড়া নিবারিত হইয়া থাকে । তিলতৈল রৌদ্রে উত্তপ্ত করিয়া উহাকে তেলাকুচার পাতার রস মিশ্রিত করিয়া ব্যবহার করিলে সত্বর ফল পাওয়া যায় ।

সতর্কীকরণ : তেলাকুচার ফলের রস কখনও উদরস্থ করিতে নাই, একমাত্র মিষ্ট তেলাকুচার ফল অর্থাৎ কু’দরী ভাজিয়া খাওয়া চলে-অন্য প্রকারের তেলাকুচার ফল নহে ।

(থানকুনি বা থুলকুড়ি)

নাম : বাংলা থানকুনি বা খুলকুড়ি। শুদ্ধ ও সংস্কৃত-মণ্ডুকপর্ণী ।

পরিচয় ঃ থানকুনির গাছ খুব ছোট ছোট হয়। যেখানে সব সময় জল পড়ে বা অল্প অল্প জল থাকে, ঐ সকল জায়গায় থানকুনি হয়। থানকুনি পাতা অনেকাংশে পদ্ম পাতার মত, তবে আকারে খুবই ছোট। ইহার ডাঁটা খুব ছোট, সরু ও নরম ।

ব্যবহার ঃ বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে থানকুনির পাতা বা পাতার রস ব্যবহার করা হইয়া থাকে। থানকুনি বহুগুণ বিশিষ্ট ।

গুণ : থানকুনি তিক্ত, কষায়, মধুর রসযুক্ত। ইহা লঘু, সারক স্বরবর্ধক, রসায়ন, মধুর বিপাক, মেধাজনক ও আয়ুষ্কর।

আময়িক প্রয়োগ ঃ ইহা রক্তদোষে, জ্বর, শোথ, কুষ্ঠ, কান, বিষদোষ মেহনাশক। মাত্রা: রস বা পাতা তিন আনা হইতে ছয় আনা।

নিম্নলিখিত রোগাদি আরোগ্য কারক

১। রক্তদোষে : থানকুনি পাতা জল সহ সিদ্ধ করিয়া উহার ক্কাথ বাহির করিতে হইবে। তৎপরে এই কাথ (৫ তোলা পরিমাণ) মধু অথবা চিনি সহ সেবন করিলে- প্রভূত উপকার পাওয়া যায় ও রক্তদোষ নিবারিত হয়।

২। আমাশয়ে : প্রত্যহ ২ তোলা পরিমাণ রস সেবনে একপক্ষ কালের মধ্যে আমাশয় আরোগ্য হয় ।

৩। জ্বর হইলে ঃ থানকুনি পাতার রস এক তোলা ও শিউলি পাতার রস এত তোলা-একত্র মিশ্রিত করিয়া প্রাতঃকালে সেবন করিলে কয়েক দিনের মধ্যে রোগী আরোগ্য লাভ করে।

৪। কাশি হইলে ঃ থানকুনি পাতার রস শুষ্ঠীচূর্ণ সহ লেহন পূর্বক সেবন করিলে কাশি নিবারিত হয়।

৫। মেহ রোগ ঃ থানকুনি পেষণ পূর্বক দুই তোলা পরিমাণ রস প্রত্যহ প্রাতঃকালে মিছরিচর্ণ সহ সেবন করিলে বিশেষ সুফল পাওয়া যায়।

(দূর্বা)

নাম : বাংলা ও সংস্কৃত-দূর্বা, হিন্দী-দুন।

পরিচয় ঃ দূর্বাকে পায়ে দলিয়াই আমরা চলিয়া থাকি। দূর্বাকে চলিত কথায় দূর্বাঘাসও বলা হয়। দূর্বা সম্বন্ধে বিশেষ পরিচয় দিবার প্রয়োজন নাই। 

দূর্বা চার প্রকার :
(ক) সাধারণ দূর্বা যে দূর্বা প্রায় সর্বত্র দেখিতে পাওয়া যায়,
(খ) নীল দূর্বা,
(গ) শ্বেত দূর্বা ও
(ঘ) গন্ড দূর্বা ।

ব্যবহার ঃ ঔষধে দূর্বার ঘাস ও মূল ব্যবহার করা হয়। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে, সকল প্রকার দুবাই ঔষধে ব্যবহার করা হইয়া থাকে। দূর্বার রস জল ছাড়াই বাহির হয়।

সাধারণ দুর্বার গুণ শীতবীর্ষ সমন্বিত, মধুর-কষায় রসযুক্ত ও তৃপ্তিদায়ক।

সাধারণ দুর্বার আময়িক প্রয়োগ : ইহা অরুচি, শ্রান্তি, পিত্ত, দাহ, ধর্মন, কক্ষ, বিসর্প ও রক্ত দোষ নাশক।

মাত্রা : (ক) মূলচূর্ণ-তিন আনা: (খ) রস-তিন তোলা; (গ) কাথ-সাত তোলা।


- নীল দূর্বার গুণ ঃ ইহা তিক্ত মধুর কথায় রসযুক্ত ও শীতবীর্ঘ সমন্বিত ।
নীল দূর্বার আময়িক প্রয়োগ : ইহা কফ, পিত্ত, দাহ, চর্মরোগ, তৃষ্ণা, রক্তদোষ বিসর্প নাশক ।

মাত্রা ঃ পাঁচ আনা ।

শ্বেত দূর্বার গুণ ঃ ইহা কষায়-তিক্ত মধুর রসযুক্ত শীতবীৰ্ষ সমন্বিত, ব্রণ নাশক এবং ওজোবর্ধক।

শ্বেত দুর্বার আময়িক প্রয়োগ ঃ ইহা পিত্ত, দাহ, কফ, তৃষ্ণা, বিসর্গ ও রক্তদোষ নাশক ।

মাত্রা : তিন আনা ।

গন্ড দূর্বার গুণ ঃ ইহা লৌহদ্ভাবক, কটুবিপাক, শীতবীর্ষ সমন্বিত, ধারক ও বায়ু বর্ধক। গণ্ডক দূর্বার আময়িক প্রয়োগ ও সাধারণ, নীল ও শ্বেত দুর্বার আময়িক প্রয়োগ সদৃশ। মাত্রা ৪৪ তোলা।

নিম্নলিখিত রোগাদি আরোগ্য কারক-

১। চর্মরোগে ও ছয় তোলা দুর্বার রস এক পোয়া বিশুদ্ধ তিল তৈল সহ মিশ্রিত করিয়া অগ্নিতে উত্তমরূপে পাক পূর্বক তদনন্তর ঈষদুষ্ণ অবস্থায় ঐ তৈল মর্দন করিলে চর্মরোগ বিদুরিত হইয়া থাকে।

২। কোন স্থান কাটিয়া গেলে : রক্ত পড়া বন্ধ করার জন্য দূর্বার বিশেষ প্রয়োজন দূর্বা পেষণ পূর্বক অথবা জল বিনা দূর্বাঘাস চর্বণ পূর্বক কাটা জায়গায় বসাইয়া ঐ স্থান বাঁধিয়া বাঁধিয়া দিলে অনতিবিলম্বে রক্তপড়া বন্ধ হয় এবং কাটা চামড়া জোড়া লাগে। রক্তপড়া বন্ধ করা দুর্নার একটি বিশেষ গুণ ।

৩। বমন ভাব বৃদ্ধি পাইলে ঃ টাটকা দূর্বার রস এক তোলা, এক তোলা পরিমাণ কাশীর চিনিসহ মিশ্রিত করিয়া অল্প জলসহ সেবন করিলে বমন ভাব নিবারিত হইয়া থাকে।

৪। রক্তপিত্ত রোগে রক্ত ৰমন হইতে থাকিলে ভাজা দূর্বার রস এক তোলা মধুসহ সেবন করাইলে রক্ত পড়া নিবারিত হইয়া থাকে। দূর্বার রস একমাস কাল নিয়মিত সেবনে-পিত্তরোগ প্রশমিত হইয়া থাকে।

৫। যোনি দিয়া অকারণ রক্ত ঝরিতে থাকিলে অথবা রক্তবাহ্য হইলে দূর্বার রস দুই তোলা—মধু মিশ্রিত করিয়া প্রত্যহ তিনবার সেবন করিলে অনতিবিলম্বে রক্তস্রাব ও রক্তদাস্ত নিবারিত হয়।

৬। স্ত্রীলোকের ঋতুর গোলযোগ ঘটিলে অথবা উপযুক্ত বয়সে ঋতু দর্শন না হইলে ঃ দুই আনা দূর্বা চূর্ণ, দুই আনা তন্ডুল (আতপ চাউল) চূর্ণ মিশ্রিত করিয়া পিষ্টক প্রস্তুত করিয়া প্রত্যহ একটি করিয়া অর্থাৎ সাতদিনে সাতটি পিষ্টক সেবন করাইলে--ঋতুর গোলযোগ নিবারিত হয় এবং যথাসময়ে ঋতুদর্শন সম্ভব হয়।

৭। মুত্র সংক্রান্ত রোগে : দূর্বার মূল ১০ তোলা, ২ কেজি জলসহ মাটির হাঁড়িতে সিদ্ধ করিতে হইবে, ৫০০ গ্রাম জল থাকিতে মাটির হাঁড়িটি উনান হইতে নামাইতে হইবে। পরে ঐ মূলযুক্ত জল ঈষদুষ্ণ অবস্থায় মধুসহ সেবন করিলে যাবতীয় মূত্র রোগ নিবারিত হইয়া থাকে।

৮। নাক দিয়া রক্ত পড়িলে : দূর্বা পেষণ পূর্বক একটি ন্যাকড়া পুঁটলির মধ্যে রাখিয়া তাহার আঘ্রাণ লইলে অথবা দূর্বা চূর্ণের নস্য গ্রহণ করিলে-নাক দিয়া রক্ত পড়া বন্ধ হয় ।

Post a Comment

0 Comments