চন্দন,জটামাংসী,জায়ফল,ডহর করঞ্জ গাছের গুণাগুণ

চন্দন

নাম ঃ বাংলা-চন্দন, সংস্কৃত-শ্রীখন্ড, হিন্দী-চন্দন । পরিচয় ঃ চন্দন নানাবিধ থাকিলেও, সচরাচর সাদা ও লাল চন্দন দেখিতে পাওয়া যায়। আর এক প্রকার চন্দনকে গোপী চন্দন বলা হয়।

চন্দন চিনিবার উপায় ও কোন চন্দন শ্রেষ্ঠ ? : যে চন্দন দেখিতে সাদা আস্বাদে তিক্ত, কাটিলে রক্তবর্ণ কষে পীত বং এবং কোটর ও গ্রন্থি সংযুক্ত-এই প্রকার চন্দনকেই সর্বশ্রেষ্ঠ বলিয়া জানিবে ।

শ্বেত চন্দনের গুণ ঃ ইহা রুক্ষ, শীতবীর্য সমন্বিত, আমোদজনক লঘু ও তিক্ত রসযুক্ত।

শ্বেত চন্দনের আময়িক প্রয়োগ : ইহা রক্তদোষ, শোথ, শ্লেষ্মা, শান্তি, বিষ পিত্ত ও তৃষ্ণা নিবারক।

রক্ত চন্দনের গুণ । ইহা অত্যন্ত শীতবীর্য সমন্বিত শুরু, কফজনক, চক্ষুর হিতকারক, তিক্ত মধুর রসযুক্ত এবং বর্ণকারক । রক্ত চন্দনের আময়িক প্রয়োগ : জ্বর, তৃষ্ণা, পিত্তজ কাশ, দাহ, কৃমি, বাত, ভ্রান্তি, রক্তদোষ, ব্রণ, বমন, রক্তপিত্ত, পিত্ত ও চক্ষুরাগ নিবারক।

গোপী চন্দনের গুণ ও আময়িক প্রয়োগ : ইহা দাহ, কফ, ক্ষত, রক্তদোষ ও প্রদর প্রশমক ।

মাত্রা : চন্দন মূল ১ তোলা পর্যন্ত, চন্দন কাষ্ঠ-চার আনা পর্যন্ত।

নিম্নলিখিত রোগ আরোগ্য কারক

১। বসন্তরোগে ঃ বসন্তরোগের প্রাথমিক অবস্থায় শ্বেত চন্দন ঘষা, কলমী বা হিে শাকের ১ তোলা পরিমাণ রস মিশ্রিত করিয়া রোগীকে পান করাইলে বসন্তের গুটিকা বাহির হইয়া পড়ে এবং জ্বরের কোন আশঙ্কা থাকে না।

২। চক্ষুরোগ হইলে অথবা চোখ উঠিলে : রক্ত চন্দন ঘষিয়া চোখের বাহিরে চোখের পাতায় প্রলেপ দিলে প্রভূত উপকার পাওয়া যায়। 

৩। মেহ রোগে : শ্বেত চন্দন ঘষা, এক আনা পরিমাণ মিছরিচূর্ণ ইসবগুলের সরবতে মিশাইয়া নিয়মিত পান করিলে বিশেষ উপকার পাওয়া যায়। চন্দনের তৈল (১৫ ফোঁটা) শীতল জলসহ সেবনেও মেহ আরোগ্য হয়।

৪। প্রমেহ হইলে ঃ এক তোলা পরিমাণ আদা, চন্দন ঘষা, তন্ডুলোদক, বিহিদানা ভিজান জল-মিশ্রিত করিয়া মধুসহ সেবনে প্রমেহ নিবারিত হইয়া থাকে ।

৫। পিত্ত ও রক্তপিত্ত রোগে ঃ গাপী চন্দন ঘষা শীতল জলসহ সেবন করিলে প্রভূত

উপকার পাওয়া যায়।

৬। প্রদর রোগে : শীতল জলসহ গোপীচন্দন পেষণ পূর্বক সেবন করিলে -প্রদর রোগ আরোগ্য হইয়া থাকে।

৭। শিশুদের নাভিপাক রোগে শ্বেত চন্দন ঘষা দ্বারা শিশুদের নাভিকুন্ড পূরণ করিলে, নাভিপাক রোগ আরোগ্য হইয়া থাকে ।

(জটামাংসী)

নাম : বাংলা-জটামাংসী, সংস্কৃত- জটামাংসী, জটিলা হিন্দী-জটামাংসী, বালছড়।

পরিচয় : হিন্দীতে জটামাংসীর অপর নাম বিল্লী-লোটন। কারণ জটামাংসীর গন্ধে 8 বিড়ালেরা মদমত্ত হয়-গাছের উপর জাল মত দেখা যায়। পাহাড়ী অঞ্চলে এই গাছকে ভূত কৈসী বলা হইয়া থাকে।

ব্যবহার ঃ ইহার মূলচূর্ণ বীজ পেষণ পূর্বক তৈল বাহির করা হয়। জটামাংসী চূর্ণ ও তৈল ঔষধে ব্যবহার করা হইয়া থাকে।

মাত্রা ঃ ২ হইতে ৭ মাষা ।

গুণ ও আময়িক প্রয়োগ : জটামাংসীর তৈল চুলকে কৃষ্ণবর্ণ করে। ইহার মূলচূর্ণ মধুসহ সেবনে মৃগী, মূর্ছা, বুক ধড়ফর ও পেটের ব্যথার উপশম হয়।

(জায়ফল)

নাম : বাংলা-জায়ফল, সংস্কৃত-জাতিফল।

পরিচয় ঃ ইহা খুবই পরিচিত ঔষধি। বিশেষ পরিচয় দিবার প্রয়োজন নাই ইহার অভ্যন্তরের ছাল 'জারিত্রী' নামে পরিচিত।

মাত্রা ঃ আধ তোলা হইতে এক তোলা। বেশি মাত্রার জায়ফল সেবন করিলে বেহুশ হইবার সম্ভাবনা থাকে। জাবিত্রী-২ মাসা।

গুণ ও আময়িক প্রয়োগ : গরমের ফলে বদহজম ও পায়খানা হইলে জায়ফল চূর্ণ ঘৃত অথবা মাখনসহ সেবন করাইলে বিশেষ সুফল পাওয়া যায়। জায়ফলের ক্কাথ তৃষ্ণা প্রশস্ত, হাজায় প্রলেপ দিলে হাজা প্রশমিত হয়।

(ডহর করঞ্জ)

নাম : বাংলা-ডহর করঞ্জ, সংস্কৃত-করঞ্জ ।

পরিচয় ঃ এই গাছ খুব বড় আকারের হইয়া থাকে। ইহার পাতা পাকুড় বৃক্ষের পাতার ন্যায়, পাতা গোল উপরিভাগ চটকদার। ফুলের রঙ-আকাশী, ফলের রঙ-নীল।

গুণ : ইহা উষ্ণ ও কটু।

আময়িক প্রয়োগ : ইহা বাত, যোনিরোগ, বাতগুল্ম, ফোঁড়া কফদোষ, বিষদোষ, কুষ্ঠ, চর্মরোগ, উদরী এবং প্রমেহ প্রভৃতি রোগ আরোগ্য কারক।

Post a Comment

0 Comments