নাগেশ্বর,পুদিনা,পদ্মা,ফলসা,বেল উপকারীতা

নাগকেশর বা নাগেশ্বর

নাম : বাংলা, সংস্কৃত ও হিন্দী-নাগকেশর।
পরিচয় ঃ এই গাছ বেশ বড় হয় । এই গাছের ছাল লাল বর্ণের। পাতা চামড়ার ন্যায় কঠিন, ফল সোয়া ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা ফলের অভ্যন্তর ভাগে চারটি করিয়া বীজ থাকে। ঐ বীজকেই নাগকেশর বলা হয়।

গুণ ও আময়িক প্রয়োগ ও মূত্রকৃচ্ছ বা মূত্ররোধ হইলে নাগকেশরের ক্বাথ সেবনে বিশেষ ফল পাওয়া যায়। জ্বর ও গেঁটে বাত নাগকেশরের ক্বাথ সেবনে নিবারিত হইয়া থাকে।

(পুদিনা)

নাম : বাংলা-পুদিনা; হিন্দী-পুদীনা; সংস্কৃত-ব্যঞ্জন, বাস্তহারী।

পরিচয় : ইহা শাক জাতীয়। পুদিনাকে শুদ্ধ ভাষায় রোচনী বলা হয়। পুদিনার চাটনী বেশ মুখরোচক।

গুণ ও আময়িক প্রয়োগ ও পুদিনা ভক্ষণে ক্ষুধামান্দ্য, অরুচি ও বমিভাব নিবারিত হয় ১। সর্দি হইলে ঃ সামান্য পরিমাণ পুদিনা পেষণ পূর্বক এক ছটাক জলে গুলিয়া।

সামান্য লবণসহ সেবন করিলে বিশেষ উপকার পাওয়া যায়। ২। অরুচি হইলে ঃ পুদিনা পেষণ পূর্বক লবণ মিশ্রিত করিয়া অম্লাহার করিলে অরুচি দূর হয়। পুদিনার চাটনীও বিশেষ মুখরোচক।

৩। বমি বমি ভাব হইলে ঃ পুদিনা পেষণ পূর্বক সামান্য লবণসহ সেবন করিলে বমি বমি ভাব দূর হয় ।

৪। কানে পোকা হইলে : পুদিনার রস দ্বারা কর্ণ পূরণ করিলে কানের পোকা বিনষ্ট হয়।

(পদ্মা)

নাম : বাংলা-পদ্ম: সংস্কৃত ও হিন্দী-কমল। পদ্মের কচি পাতাকে সংবর্তিকা বলা হয়। পদ্মের বীজকোষকে কর্ণিকা এবং পদ্মের কেশরকে কিজঙ্ক বলা হয়।

পরিচয় : শ্বেতপদ্ম ও লাল পদ্ম দুই প্রকারের পদ্ম দেখা যায়—পদ্ম ফুল দেখিয়াই গাছ নির্ণয় করিতে হয়।

ব্যবহার : ঔষধে পদ্মের কচিপাতা, মূল, নাল ও ফুল ব্যবহার করা হইয়া থাকে পদ্মের নালকে অর্থাৎ ডাটাকে সংস্কৃত ভাষায় মৃণাল বলা হয়। পদ্মের মূলও মৃণালের মতই সমগুণ বিশিষ্ট।

লাল পদ্মের গুণ : ইহা শীতবীর্য, সমন্বিত, বর্ণ প্রসাদক ও মধুর রসযুক্ত।


লাল পদ্মের আময়িক গুণ : ইহা বিসর্গ, বিস্ফোর্ট, পিত্ত, কফ, দাহ, বিষদোষ ও তৃষ্ণানাশক ।

শ্বেত পদ্মের গুণ ঃ ইহা শীতবীর্য সমন্বিত ও মধুর তিক্ত রসযুক্ত।
শ্বেত পদ্মের আময়িক প্রয়োগ ঃ ইহা দাহ, পিত্ত, কফ, রক্তদোষ ও পিপাসা নিবারক ।

সংবর্তিকা (পদ্মের কচিপাতা)
সংবর্তিকার গুণ । ইহা তিক্ত-কথায় মধুর রসযুক্ত ও শীতবীর্য সমন্বিত।

সংবর্তিকার আময়িক প্রয়োগ : ইহা রক্তপিত্ত, অর্শ, দাহ, তৃষ্ণা ও মূত্রকৃচ্ছতা নিবারক।

কর্ণিকা (পদ্মের বীজকোষ)
কর্ণিকার গুণ : ইহা লঘু, শীতবীর্য সমন্বিত ও ভিক্তকথায় মধুর রস, সংযুক্ত। কর্ণিকার আময়িক প্রয়োগ : ইহা পিত্ত, কফ, রক্তদোষ ও তৃষ্ণা নিবারক।

কিজঙ্ক (পদ্ম কেশর)

কিজঙ্কের গুণ : ইহা ধাবক, কমায়, রসযুক্ত এবং শুক্রবর্ধক। কিজঙ্কের আময়িক প্রয়োগ : ইহা শোথ, কফ, পিত্তদাহ, রক্তার্শ ও তৃষ্ণা নাশক ।

মৃণাল (পদ্মের নাল)

মৃগালের গুণ ইহা রুক্ষ, শুরু, মল সংগ্রাহক, কফ কারক, বায়ুজনক স্তন্যবর্ধক, শীতবীর্য সমন্বিত, মধুর, রসযুক্ত এবং শুক্রবর্ধক।

মৃণালের আময়িক প্রয়োগ ইহা দাহ, পিত্ত, রক্তদোষ নাশক।
মাত্রা ঃ
(ক) পদ্মের ফুল সিকি তোলা হইতে আধ তোলা ।
(খ) ফুল, নাল, মূল ও পাতা একত্রে-পাঁচ আনা । (গ) ফল, নাল, ফুল, পত্র-প্রতিটি চার আনা হইতে এক তোলা পর্যন্ত ।

নিম্নলিখিত রোগাদি আরোগ্য কারক

১। অর্শ হইলে ঃ পদ্মের কচি পাতার রস কিংবা পদ্মকেশর চূর্ণ চিনি ও মাখনসহ নিয়মিত সেবন করিলে অর্শ নিবারিত হইয়া থাকে।

২। রক্তের দোষে ঃ পদ্মের নাল বা মৃণাল ব্যবহার করিলে বিশেষ উপকার পাওয়া যায় ।

৩। জ্বরে পিপাসা বৃদ্ধি পাইলে : পদ্মকেশর চূর্ণ শীতল জলসহ সেবনে তৃষ্ণা নিবারিত হয় ।

৪। মুখ দিয়া রক্ত উঠিলে : এক তোলা পরিমাণ পদ্মের কচি পাতার রস মিছরিচূর্ণসহ সেবন করিলে রক্ত পড়া বন্ধ হয় অথবা কিজন্ত (কেশর চিনিসহ সেবন করিলেও উপকার পাওয়া যায়।

৫। মূত্ররোধ বা মূত্রকৃচ্ছ্র হইলে ঃ এক তোলা পরিমাণ পদ্মের কচি পাতার রস সেবনে সুফল পাওয়া যায়।

৬। শিরঃরোগে ঃ পদ্মের কচিপাতা ও ফুল একত্রে পেষণ পূর্বক মস্তকে প্রলেপ দিলে শিবঃরোগ নিবারিত হইয়া থাকে।

৭। গর্ভপাতের আশঙ্কা থাকিলে ও পদ্মবীজ চূর্ণ গর্ভিণীকে সেবন করালে গর্ভপাতের ভয় থাকে না।

৮। দাহ রোগে অথবা হাত-পা জ্বালা করিলে ঃ পদ্মের কচি পাতা ও ফুল একত্রে পেষণ পূর্বক মর্দন করিলে দাহ নিবারিত হইয়া থাকে।

৯। রক্তপিত্ত রোগে : এক তোলা পরিমাণ পদ্মের কচিপাতার রস চিনিসহ সেবন করিলে রক্ষপিত নিবারিত হইয়া থাকে।

১০। কফ সংযুক্ত জ্বরে সামান্য পরিমাণ পদবীজচূর্ণ মধুসহ সেবন করিলে বিশেষ উপকার পাওয়া যায়।

(ফলসা (পাকা)

ইহা ক্ষয়, দাহ, জ্বর, পিত্ত ও রক্তদোষ নাশক।

(বেল)

নাম : বাংলা-বেল, হিন্দী-বেল, সংস্কৃত-বিল্ব। 

পরিচয় ঃ বেলগাছ আমরা সকলেই চিনি । বেলপাতা ব্যতীত শিবপূজা হয় না। বেল ফলের বাহিরের আবরণ অত্যন্ত শক্ত।
বেল প্রকারভেদে দুই অবস্থায় পাই-
(ক) কচিবেল ও 
(খ) পাকা বেল ।

ব্যবহার : ঔষধে কটি বেলেরই বিশেষ প্রয়োজন। কচি বেলকে বিহু ককটা বলা হইয়া থাকে। ঔষধে বেলগাছের পাতা, শিকড়ের ছাল ও বেল ব্যবহার হইয়া থাকে ।

১। অম্বল ও অজীর্ণ রোগে : খুঁটের আগুনে কাঁচা বেল দগ্ধ করিয়া আখের গুড় সহ সেবন করিলে আমাশয়, অম্বল ও অজীর্ণ নিবারিত হ‍ইয়া থাকে। 

২। পেটের অসুখ হইলে কাঁচা বেল পোড়া অত্যন্ত উপকারী—কারণ ইহার ধারক শক্তি প্রচুর। কাঁচা বেল পোড়া খাইলে পাতলা দাস্ত বন্ধ হয়।

৩। পরিপাক ক্রিয়ার ব্যাঘাত ঘটিলে : হজমশক্তি কম হইলে কাঁচা বেল পোড়া সেবনে হজম শক্তি বা পরিপাক শক্তি বৃদ্ধি পায়।

৪। ধর্ম জনিত দুর্গন্ধে ও বেলপাতার রস গাত্রে মর্দন করিলে দুর্গন্ধ দূর হয়।

৫। সর্দি হইলে ঃ কাঁচা বেল সেবনে বিশেষ উপকার পাওয়া যায়।

৬। ক্ষুধা মন্দা হইলে ঃ কচি বেল পোড়া ভক্ষণে ক্ষুধা বৃদ্ধি পাইয়া থাকে ।

৭। প্রলাপ বা ভুল বকা ও বেলপাতা পেষণপূর্বক মন্ত্রকে প্রলেপ দিলে-প্রলাপ বা ভুপ বকা বন্ধ হয়। 

৮। অর্শরোগ ঃ পাকা বেল ভক্ষণে নিবারিত হইয়া থাকে।

৯। চক্ষু রোগ ও কর্ণরোগে বেলফুল প্রয়োগে উপকার পাওয়া যায়। বেলফুল পেষণপূর্বক তাহার রত্নদ্বারা কর্ণ পূরণ করিলে কর্ণরোগ নিবারিত হয়। এবং সেই রস চোখের চারিপাশে (বাহিরে) লাগাইলে চক্ষুরোগ প্রশমিত হইয়া থাকে

১০। কোষ্ঠবদ্ধতায় : পাকা বেল সেবনে কোষ্ঠ পরিষ্কার হইয়া থাকে। অবশ্য পাকা বেল বেশী খাওয়া উচিত নয়। কারণ ইহা ক্ষুধামান্দ্যের অন্যতম কারণ বিশেষ ।

১১। বমি বমি ভাব বৃদ্ধি পাইলে বেলগাছের শিকড়ের ছালেন রাখ একতোলা পরিমাণ মধুসহ সেবন করিলে বমি বমি ভাব দূর হয় এবং বমন রোগ প্রকাশিত হয়।

১২। শ্লেম্মা রোগে (তরুণ নিউমোনিয়া) : বিনা জলে বেলপাতা পেষণ পূর্বক বুকে প্রলেপ দিলে বিশেষ সুফল পাওয়া যায়।

কচি বেলের গুণ : ইহা কটূ কথায় তিক্ত রসযুক্ত, স্নিগ্ধ, লঘু ও উষ্ণ বীর্য সমন্বিত।
কচি বেলের আময়িক প্রয়োগ : ইহা ধারক, আমের পাচক, অগ্নিদ্দীপক, কফ ও বায়ুনাশক ।

পাকা বেলের গুণ ইহা শুরু, দুষ্পাচ্য, মধুর রসযুক্ত ত্রিদোষজনক।
পাকা বেলের আময়িক প্রয়োগ : ইহা পুতিবায়ুজনক, বিদাহী, অগ্নিমান্দ্যকর ও বস্টম্ভকারক ।

বেল গুঁঠ তৈয়ার করিবার প্রণালী-
চাকা চাকা করিয়া কচি বেল কাটিয়া ইহার আঠা, বীজ ও খোসা বাদ নিয়া-ভালভাবে রোদে শুকাইয়া লইতে হইবে-তদনন্তর শুদ্ধ হইলে উহা কাচের বোতল অথবা জারের মধ্যে রাখিয়া উত্তমরূপে ঢাকনা বন্ধ করিয়া রাখিলে বেল শুষ্ঠ প্রস্তুত হইয়া থাকে ।

বেলের মোরব্বা প্রস্তুত করিবার প্রণালী-
চাকা চাকা করিয়া বেল কাটিয়া উহার আঠা, বীজ ও খোলা বাদ দিয়া-চিনির ঘন রসে উত্তমরূপে সিদ্ধ করিতে হইবে-তৎপরে ঢাকনাওয়ালা কাচের জারে বন্ধ করিয়া রাখিতে হইবে। ইহাই বেলের মোরব্বা।

বেল কোন্ কোন্ রোগ আরোগ্য কারক

১। আমাশয় কার্ভিস পেপসিয়ায় : বেলের মোরব্বা পথ্য ও ঔষধের কাজ করে। বেল শুঁঠও এই রোগে বিশেষ ফলপ্রদ ।

Post a Comment

0 Comments