দেবদারু,ধুতুরা,নিম গাছের উপকারীতা

দেবদারু

নাম : বাংলা, সংস্কৃত ও হিন্দী-দেবদারু ।

পরিচয় ঃ দেবদারু এক প্রকার বড় বৃক্ষ । ইহা অন্যান্য বৃক্ষ অপেক্ষা উচ্চতায় ও আকারে বড়। ইহার ফল সবুজ রঙের পাতা সরু এবং ঝাঁটার কাঠির মত।

ব্যবহার ঃ ঔষধে ইহার ছাল ব্যবহার করা হইয়া থাকে। গুণ ইহা তিক্ত, লঘু ও স্নিগ্ধ, কটু বিপাক ও উষ্ণবীর্য সমন্বিত।
মাত্রা : পাঁচ আনা ।

আময়িক প্রয়োগ ঃ ইহা কাশ, কভু, জ্বর, বায়ু, শোথ, হিক্কা, তন্দ্রা, প্রমেহ আমদোষ ও রক্তদোষ নাশক ৷

নিম্নলিখিত রোগাদি আরোগ্য কারক
১। পেটে বায়ু জন্মিলে ঃ এক তোলা দেবদারুর কাথ মধুসহ সেবন করিলে কুপিত নিবারিত হয়।

২। আমাশয়ে ঃ দেবদারুর ক্বাথ ও ছালচূর্ণ বিশেষ ফলপ্রদ ।

৩। চুলকানি হইলে : দেবদারুর ছালচূর্ণ সরিষার তৈলের সহিত মিশ্রিত করিয়া উত্তমরূপে মর্দন করিলে, চুলকানি নিবারিত হইয়া থাকে ।

৪। কাশি হইলে : দেবদারুর ছালচূর্ণ মধুসহ মিশ্রিত করিয়া লেহন পূর্বক সেবন করিলে, কাশি নিবারিত হইয়া থাকে।

৫। প্রমেহ হইলে ঃ দেবদারু ছালের রস এক তোলা মিছরির সরবতসহ মিশ্রিত করিয়া নিয়মিত প্রাতঃকালে সেবন করিলে, প্রমেহ নিবারিত হয়। 

৬। রক্তদোষ ও শোখে : দেবদারুর ক্কাথ বিশেষ উপকারী। অল্প মাত্রায় ক্কাথ নিয়মিত সেবন করিলে, শোথ ও রক্তদোষ নিবারিত হয়।

(ধুতুরা)

নাম : বাংলা-ধুতরা, সংস্কৃত-বৃত্তর, ধুত্তর। হিন্দী-ধরা।

পরিচয় : বাঙালী মাত্রই ধুতুরা ফুল চেনেন। ইহা শিব-পুজায় লাগে ফুল গোড়ার দিক সরু মাথার দিক চওড়া অনেকটা কন্ধের মত।
ধুতুরা দুই প্রকার : (১) সাদা ধুতুরা ও (২) কনক ধুতরা। সাদা ধুতুরা প্রায় সর্বত্রই দেখা যায়। সাদা ধুতুরার ফুলের রঙ সাদা। কনক ধুতুরার রঙ বেগুনী। কনক ধুতুরা ফুলের মধ্যে আর একটি থাক্ দেখা যায়, মনে হয় যেন ফুলের অভ্যন্তরে আর একটি ফুল রহিয়াছে।

ব্যবহার ঃ ঔষধে ধুতুরার পাতা, শিকড় ও বীজ ব্যবহার করা হইয়া থাকে। ধুতুরা বেশি পরিমাণে অর্থাৎ মাত্রায় বেশি সেবন করা উচিত নহে কারণ ইহা বিষাক্ত। ঔষধে কনক ধুতুরার ব্যবহার বেশি কিন্তু অভাবে শ্বেত ধুতুরাও ব্যবহার করা চলে । 

গুণ : ইহা কষায় মধুরতিক্ত রসযুক্ত, উষ্ণবীর্য সমন্বিত, বায়ুজনক, বর্ণপ্রসাদক, অগ্নিবর্ধক, মদকারক, মূত্রকারক ও নিদ্রাজনক।

আময়িক প্রয়োগ : ইহা জ্বর, কুষ্ঠ, ব্রণ, কভু, কফ, বিষ, বেদনা ও উকুনাদি কীটনাশক । মাত্রা : (ক) পাতার রস-৪ ফোঁটা (খ) বীজ-সিকি আনা (গ) মূলের শিকড় -এক আনা।

নিম্নলিখিত রোগ আরোগ্য কারক-

১ । কুলো ও বেদনায় ঃ ধুতুরা পাতার রসের প্রলেপ দিলে বা ঐ রস সেবন করিলে বিশেষ উপকার পাওয়া যায়।

২। খুব জোরে শ্বাস বহিলে ধুতরার ধুমপানে সুফল পাওয়া যায।

৩। চোখের তারা ক্ষুদ্র হইলে : চোখের চারিদিকে (অর্থাৎ বাইরে) ধুতুরার প্রলেপ দিলে চক্ষু তারা প্রসারিত হইয়া থাকে।

৪। দাঁত বা কানের গোড়া ফুলিলে এবং ঠাণ্ডা লাগিয়া গলা ফুলিলে ধুতুরা পাতার রসে কিঞ্চি আফিম মিশ্রিত করিয়া বেদনাযুক্ত স্থানে লাগাইলে অবিলম্বে বেদনা প্রশমিত হইয়া থাকে।

৫। ফোঁড়া হইলে ঃ ধুতুরা পাতার রসের সহিত গব্যঘৃত মিশ্রিত করিয়া ফোঁড়ার চারিদিকে প্রলেপ দিলে, ফোঁড়া সত্বর পাকে ও ফাটিয়া যায় ।

৬। স্ত্রীলোকের স্তনে বেদনা হইলে ও ধুতুরা পাতার রসের সহিত অল্প পরিমাণে চুন ও হলুদ মিশ্রিত করিয়া স্তনে প্রলেপ দান করিলে বেদনা নিবারিত হয়।

৭। অজীর্ণ রোগে ধুতরার বীজ বিশেষ উপকারী। ৩ দানা বীজ পেষণ পূর্বক শীতল জলসহ আহারের পরে সেবন করিলে ভুক্তদ্রব্য পরিপাক হইয়া থাকে।

বিশেষতঃ ছোলা, মাষকলাই, মটর, মুগ ও যব ভক্ষণে অজীর্ণ হইলে তিন দানা বীজ পেষণ পূর্বক শীতল জলসহ সেবন করিলে, আহার্য দ্রব্য পরিপাক হয়।

৮। শ্বাসকষ্ট হইলে ঃ শুকনো ধুতুরা পাতা ও ডাঁটা চূর্ণ করিয়া কণিকায় চড়াইয়া ধুমপান করিলে, শ্বাসকষ্ট শীঘ্র প্রশমিত হয়।

৯। কিষিযোগে দুই ফোঁটা ধুতুরা পাতার রস ঘোলসহ মিশ্রণ পূর্বক সেবন করিলে ক্রিমি বিনষ্ট হয়।

(নিম)

নাম : বাংলা-নিম, সংস্কৃত-নিম্ন, পিচুমদ, হিন্দী-নিম।

পরিচয় : নিমগাছ অনেকেই চেনেন। সেইহেতু বিশেষ পরিচয় দিবার প্রয়োজন নাই নিমপাতা বা নিমের দাঁতন অনেকেই ব্যবহার করিয়াছেন। বলা বাহুল্য ইহা তিক রসযুক্ত। নিমগাছের হাওয়া স্বাস্থ্যপ্রদ বলিয়া অনেকেই বাড়িতে রোপন করেন।

ব্যবহারঃ ঔষধে নিম গাছের পাতা, ছাল ও ফল ব্যবহৃত হইয়া থাকে। ফাল্গুন-চৈত্র মাসে নিমের কচিপাতা অরুচিনাশক ও বিশেষ উপকারী।

গুণ ইহা লঘু, কটু, বিপাক, শীতবীর্য সমন্বিত, অহৃদ্য বায়ুনাশক ও অগ্নিদীপক ।


আময়িক প্রয়োগ ঃ ইহা কুষ্ঠ, ব্রণ, কাশ, স্বর, কফ, ক্রিমি, পিত্ত, বমি, প্রমেহ অরুচি ও তানশিক

নিম পাতার গুণ ঃ ইহা চক্ষুর হিতকারী, কটুবিপাক ও বায়ুবর্ধক ।

নিমপাতার আমিয়ক প্রয়োগ : ইহা বিষদোষ, পিত্ত, ক্রিমি ও সর্বাবিধ অরুচিনাশক।

নিম ফলের গুণ ঃ ইহা তিক্ত রসযুক্ত, কটুবিপাক, লঘু উষ্ণবীর্য সমন্বিত, স্নিগ্ধ ও ভেদক। আময়িক প্রয়োগ ও ইহা অৰ্শ, গুল্ম, কুষ্ঠ, ক্রিমি ও প্রমেহনাশক।

নিম্নলিখিত রোগাদি আরোগ্য কারক-

১। খোস পাঁচড়া হইলে : নিমপাতার সিদ্ধ জলে যা ধুইতে হইবে। তৎপরে নিমপাতা ও কাঁচা হলুদ একত্রে পেষণ পূর্বক খোস-পাঁচড়ায় প্রলেপ দিলে পোকা মরিয়া যায় এবং খোস পাঁচড়া নিবারিত হয়।

২। পেটে ক্রিমি হইলে এক আনা পরিমাণ নিমছাল চূর্ণ সৈন্ধব লবণসহ যোগে এক সপ্তাহ কাল প্রতিদিন প্রাতঃকালে সেবন করিলে মলের সহিত কৃমি নির্গত হইয়া আসে ।

৩। জ্বর ও তৃষ্ণায় : নিম ছালের ক্বাথ সেবনে বিশেষ উপকার পাওয়া যায়। জ্বর ও তৃষ্ণা নিবারিত হয়।

৪ । কাশি হইলে ঃ এক তোলা পরিমাণ নিমের কাথ মধুসহ প্রত্যহ দুইবার সেবন করিলে তিন দিনের মধ্যেই কাশি নিবারিত হইয়া থাকে।

৫। পিত্তদোযে । প্রতিদিন এক তোলা পরিমাণ নিমের কাথ সেবনে এক সপ্তাহ কালের মধ্যেই পিরঘটিত দোষ দূরীভূত হয়।

৬। উপদংশজনিত ক্ষত বা গরমীর ঘা হইলে : কিছু নিমপাতা জলে ধুইয়া পেষণ পূর্বক রস বাহির করিয়া এক ছটাক রস, এক ছটাক গব্যঘৃত, দশ আনা মুদ্রাশঙ্খচূর্ণ, চার আনা তুঁতে এবং একটি দণ্ড জাঙ্গী হরীতকী চূর্ণ করিয়া উহার সহিত মিশাইয়া খুঁটের আগুনে আধ ঘণ্টাকাল জ্বাল দিতে হইবে এবং অনবরত নাড়িতে হইবে। তৎপরে মলম ন্যাকড়ায় মাখাইয়া গরমীর ঘায়ে সাতবার লাগাইলে গরমী ঘা যতই প্রবল হউক না কেন, অবশ্যই নিবারিত হইবে।

৭। বসন্তে নিমপাতা ও কাঁচা হলুদে পেষণ পূর্বক বসন্তের গুটিতে প্রলেপ দিলে ২/৩ দিনের মধ্যেই বসন্তের গুটি শুকাইয়া যায়।

৮। ফোড়া ফাটিয়া গেলে নিমপাতা ও গব্যঘৃত একত্র মিশ্রিত করিয়া আগুনে পাক করিয়া সেই ঘৃত ফোঁড়ায় লাগাইলে পুঁজ বাহির হইয়া যায় ও ফোঁড়া শুকায়।

Post a Comment

0 Comments